থিওরি অব রিলেটিভিটি (Theory of Relativity) একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব, যা আলবার্ট আইনস্টাইন ১৯০৫ সালে এবং ১৯১৫ সালে প্রস্তাবিত করেছিলেন। এটি দুইটি প্রধান অংশে বিভক্ত:
১. স্পেশাল রিলেটিভিটি (Special Relativity) – ১৯০৫
স্পেশাল রিলেটিভিটি তত্ত্বটি মূলত গতির সাথে সম্পর্কিত এবং এটি বলে যে, যদি কোন বস্তুর গতি আলোর গতির কাছাকাছি হয়, তাহলে স্থান এবং সময়ের অনুভব পরিবর্তিত হতে পারে। এর কিছু প্রধান ধারণা:
দ্বৈততা (Relativity of Simultaneity): যে দুটি ঘটনা পৃথক স্থানে ঘটছে, সেগুলি একই সময়ে ঘটে কিনা, তা পর্যবেক্ষকের গতির উপর নির্ভর করবে।
সময় ও স্থান সংকোচন (Time and Length Contraction): একে অন্যের মধ্যে চলমান দুটি পর্যবেক্ষকের জন্য একই ঘটনা সময় এবং স্থানগতভাবে আলাদা অনুভূত হতে পারে। অর্থাৎ, এক পর্যবেক্ষক যেভাবে সময় এবং স্থান দেখতে পায়, অন্য পর্যবেক্ষক তা ভিন্নভাবে দেখবে।
বিশ্বস্ততা (Invariance of the Speed of Light): আলোর গতি সর্বদা একই থাকবে, এটি পর্যবেক্ষকের গতির উপর নির্ভর করে না। অর্থাৎ, সকল পর্যবেক্ষকের জন্য আলোর গতি ৩ লাখ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ড।
এটি বিশেষভাবে ধারণা দেয় যে, সময় এবং স্থান একে অপরের সাথে সম্পর্কিত, অর্থাৎ, একে অপরকে মিশ্রিত বা একে অপরের উপর নির্ভরশীল। এর ফলে, একটি গতিশীল বস্তুর সময় এবং স্থান একেবারে স্থির বস্তুর চেয়ে আলাদা হয়ে যাবে।
২. জেনারেল রিলেটিভিটি (General Relativity) – ১৯১৫
জেনারেল রিলেটিভিটি তত্ত্বটি একটি আরো উন্নত পর্যায়, যা মহাকর্ষের ব্যাখ্যা দেয় এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তি বা গ্র্যাভিটি সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে নতুনভাবে উপস্থাপন করে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী:
মহাকর্ষ এবং স্থান-কাল (Space-time): গ্র্যাভিটি বা মাধ্যাকর্ষণ কোন ধরণের শক্তি নয়, বরং এটি স্থান এবং কাল (space-time) এর বক্রতার ফলস্বরূপ। একটি বড় মাপের বস্তু, যেমন একটি গ্রহ বা তারা, তার আশেপাশের স্থান-কালকে বেঁকে দেয়। আর এটি সেই বেঁকে যাওয়া স্থান-কালেই বস্তুগুলোকে আকর্ষণ করে, যা আমরা গ্র্যাভিটি হিসেবে অনুভব করি।
মাধ্যাকর্ষণ তরঙ্গ (Gravitational Waves): এর মাধ্যমে আইনস্টাইন প্রমাণ করেন যে, মহাকর্ষও তরঙ্গের মতো চলে, যা স্থান-কাল পরিবর্তন করে এবং এই তরঙ্গ আলোর গতিতে ছড়ায়। ২০১৫ সালে এর প্রথম প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায়।
প্রধান ধারণা:
সময় এবং স্থান একে অপরের সাথে সম্পর্কিত এবং একে অপরের উপর নির্ভরশীল।
আলোর গতি সব পর্যবেক্ষকের জন্য সর্বদা একই থাকে।
মাধ্যাকর্ষণ শক্তি স্থান-কাল বক্রতার কারণে সৃষ্টি হয়, তা কোনও শক্তির দ্বারা নয়।
থিওরি অব রিলেটিভিটি বিজ্ঞানে এক বিপ্লবের সূচনা করে এবং আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি তৈরি করেছে।