মেসোপটেমিয়া সভ্যতাকে "সভ্যতার জননী" বলা হয় কারণ এটি পৃথিবীর প্রথম সুসংগঠিত এবং উন্নত সভ্যতাগুলোর মধ্যে অন্যতম, যেখানে মানুষের জীবনযাত্রায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছিল। নিচে এই সভ্যতাকে "সভ্যতার জননী" বলা হওয়ার প্রধান কারণগুলো তুলে ধরা হলো:
১. প্রথম শহর ও নগর গঠন:
মেসোপটেমিয়া সভ্যতা ছিল পৃথিবীর প্রথম শহরকেন্দ্রিক সভ্যতা।
এখানে গড়ে উঠেছিল প্রথম পরিকল্পিত নগর যেমন উর, উরুক, এবং সুমের।
নগর রাষ্ট্র গঠনের ধারণা এখান থেকেই শুরু হয়।
২. লেখার প্রচলন:
মেসোপটেমিয়াতেই প্রথম লিপির উদ্ভব ঘটে, যা কিউনিফর্ম লিপি (Cuneiform) নামে পরিচিত।
এটি মানব ইতিহাসে প্রথম লিখিত ভাষার উদাহরণ, যা যোগাযোগ এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে সুসংগঠিত করে।
৩. আইনের প্রচলন:
মেসোপটেমিয়ার বিখ্যাত হাম্মুরাবির আইন সংহিতা (Code of Hammurabi) পৃথিবীর প্রথম লিখিত আইনব্যবস্থা।
এটি আইনের শাসনের ধারণা এবং বিচারব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করেছিল।
৪. কৃষি বিপ্লব:
মেসোপটেমিয়া সভ্যতার মানুষই প্রথম সেচব্যবস্থা ও পরিকল্পিত কৃষির প্রচলন ঘটায়।
তারা ইউফ্রেটিস এবং টাইগ্রিস নদীর পানি ব্যবহার করে সেচ ব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যা কৃষিকে আরও উন্নত করে।
৫. ধর্ম এবং সংস্কৃতি:
মেসোপটেমিয়া সভ্যতার মানুষ বহু দেব-দেবীর উপাসনা করত এবং প্রাচীন মন্দির বা জিগুরাট তৈরি করত।
এখানকার ধর্ম ও সংস্কৃতি পরবর্তীকালে অন্যান্য সভ্যতাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
৬. গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান:
মেসোপটেমিয়াতেই প্রথম গণিতের ব্যবহার শুরু হয়।
তারা ৬০ ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতির উদ্ভাবন করে, যা আধুনিক সময়েও সময় গণনা এবং কোণ পরিমাপে ব্যবহৃত হয়।
এছাড়াও, তারা গ্রহ-নক্ষত্রের পর্যবেক্ষণ এবং ক্যালেন্ডার তৈরি করে।
৭. বাণিজ্য ও অর্থনীতি:
মেসোপটেমিয়ার মানুষ প্রথম সুসংগঠিত অর্থনীতি চালু করেছিল।
তারা মুদ্রা ব্যবস্থার পূর্বে বার্টার সিস্টেম বা বিনিময় প্রথা চালু করে।
এখান থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সূচনা ঘটে।
৮. শিল্প ও প্রযুক্তি:
মেসোপটেমিয়ার মানুষ প্রথম চাকা, ধাতব সরঞ্জাম, এবং ইঁট তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবন করে।
তাদের শিল্পকলা এবং স্থাপত্যকলা পরবর্তীকালে অন্যান্য সভ্যতাকে প্রভাবিত করে।
সারসংক্ষেপ:
মেসোপটেমিয়া সভ্যতা মানব সভ্যতার অনেক মৌলিক ধারণার ভিত্তি স্থাপন করেছে, যা পরবর্তীকালে অন্যান্য সভ্যতাগুলোর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের আবিষ্কার, উদ্ভাবন, এবং সাংস্কৃতিক অবদানগুলোর কারণেই মেসোপটেমিয়াকে "সভ্যতার জননী" বলা হয়।