পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল পাঁচটি প্রধান স্তরে বিভক্ত। প্রতিটি স্তরের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং এগুলো ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতার ভিত্তিতে বিভাজিত। নিচে স্তরগুলোর বিবরণ দেওয়া হলো:
১. ট্রপোস্ফিয়ার (Troposphere)
-
উচ্চতা: ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮ থেকে ১৫ কিলোমিটার (মেরু অঞ্চলে কম এবং বিষুব অঞ্চলে বেশি)।
-
বৈশিষ্ট্য:
-
বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তর এবং মানুষের জীবনধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
-
আবহাওয়া (মেঘ, বৃষ্টি, তাপমাত্রার পরিবর্তন) এই স্তরে ঘটে।
-
উচ্চতার সাথে তাপমাত্রা কমে।
২. স্ট্রাটোস্ফিয়ার (Stratosphere)
-
উচ্চতা: ট্রপোস্ফিয়ার থেকে শুরু করে প্রায় ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
-
বৈশিষ্ট্য:
-
এই স্তরে ওজোন স্তর (Ozone Layer) রয়েছে, যা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে।
-
তাপমাত্রা উচ্চতার সাথে ধীরে ধীরে বাড়ে।
-
বাতাস স্থির থাকে, তাই বিমানচালনার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর।
৩. মেসোস্ফিয়ার (Mesosphere)
-
উচ্চতা: ৫০ কিলোমিটার থেকে প্রায় ৮৫ কিলোমিটার পর্যন্ত।
-
বৈশিষ্ট্য:
-
এই স্তরে তাপমাত্রা উচ্চতার সাথে হ্রাস পায়।
-
মেসোস্ফিয়ারে গ্রহাণু ও উল্কাপিণ্ড পুড়ে যায়, যা পৃথিবীর জন্য সুরক্ষার কাজ করে।
-
এটি বায়ুমণ্ডলের শীতলতম স্তর।
৪. থার্মোস্ফিয়ার (Thermosphere)
-
উচ্চতা: ৮৫ কিলোমিটার থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
-
বৈশিষ্ট্য:
-
এই স্তরে তাপমাত্রা উচ্চতার সাথে দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং হাজার ডিগ্রিতে পৌঁছাতে পারে।
-
অরোরা (Aurora) বা মেরুপ্রভা এই স্তরে দেখা যায়।
-
রেডিও সংকেত প্রতিফলনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৫. এক্সোস্ফিয়ার (Exosphere)
-
উচ্চতা: প্রায় ৬০০ কিলোমিটার থেকে ১০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
-
বৈশিষ্ট্য:
-
এটি বায়ুমণ্ডলের সর্বোচ্চ স্তর এবং মহাকাশের সাথে সংযুক্ত।
-
এই স্তরে গ্যাসের ঘনত্ব খুবই কম এবং পরমাণুগুলো মহাকাশে পালিয়ে যায়।
-
উপগ্রহগুলো এই স্তরে কক্ষপথে আবর্তিত হয়।
অতিরিক্ত স্তর
-
আইওনোস্ফিয়ার (Ionosphere): এটি থার্মোস্ফিয়ার এবং এক্সোস্ফিয়ারের অংশ, যেখানে সৌর বিকিরণের কারণে গ্যাস আয়নে রূপান্তরিত হয়। এটি রেডিও যোগাযোগে সহায়তা করে।
এই স্তরগুলো একসঙ্গে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল গঠন করে এবং আমাদের গ্রহকে বিভিন্ন ধরণের সুরক্ষা ও কার্যকরী পরিবেশ প্রদান করে।