ইসলামের ইতিহাসে বায়তুল্লাহ (কাবা শরিফ) পুনর্নির্মাণের ঘটনা একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পুনর্নির্মাণের ঘটনা হলো মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়তপ্রাপ্তির আগে, যখন কুরাইশ গোত্র কাবা পুনর্নির্মাণ করেছিল।
পুনর্নির্মাণের প্রেক্ষাপট:
কাবা শরিফ প্রথমে হজরত আদম (আ.) নির্মাণ করেন বলে ইসলামী বিশ্বাস। পরে হজরত ইব্রাহিম (আ.) এবং তাঁর পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) এটি পুনর্নির্মাণ করেন। তবে সময়ের পরিক্রমায় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে কাবার কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কুরাইশ গোত্রের সময়ে কাবার কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়লে তারা এটি পুনর্নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তাদের মধ্যে দ্বিধা ছিল, কারণ কাবা নির্মাণে শুধু হালাল উপার্জনের অর্থ ব্যবহার করা যাবে।
পুনর্নির্মাণের ঘটনা:
১. কারণ ও উদ্যোগ:
মক্কায় একটি বড় বন্যার কারণে কাবার দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এটি পুনর্নির্মাণের প্রয়োজন হয়। কুরাইশরা সম্মিলিতভাবে এই কাজ শুরু করে।
২. নির্মাণ কাজ শুরু:
কুরাইশরা কাবার পুরনো কাঠামো ভেঙে ফেলে এবং নতুনভাবে নির্মাণ শুরু করে। তবে তারা চেয়েছিল এই কাজে আল্লাহর সম্মান রক্ষা করে চলতে।
৩. হাজরে আসওয়াদের স্থান নিয়ে বিরোধ:
পুনর্নির্মাণের পর হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) বসানোর সময় কুরাইশ গোত্রের বিভিন্ন শাখার মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। প্রতিটি গোত্র চেয়েছিল তারা এটি স্থাপন করবে।
৪. মহানবী (সা.)-এর বিচার:
বিরোধ সমাধানের জন্য সবাই সম্মত হয় যে, কাবায় প্রবেশকারী প্রথম ব্যক্তিকে এই সমস্যার সমাধান করতে দেওয়া হবে। প্রথম প্রবেশকারী ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সা.), যিনি তখনও নবুয়তপ্রাপ্ত হননি।
তিনি বিচক্ষণতার সাথে একটি চাদর এনে তাতে হাজরে আসওয়াদ রাখেন এবং প্রতিটি গোত্রপ্রধানকে চাদরের একেকটি প্রান্ত ধরতে বলেন। পরে নিজ হাতে তিনি এটি স্থাপন করেন।
শিক্ষণীয় দিক:
-
এই ঘটনা মহানবী (সা.)-এর প্রজ্ঞা এবং ন্যায়বিচারের গুণ প্রকাশ করে।
-
এটি কুরাইশ গোত্রের ঐক্য ও সহযোগিতার একটি উদাহরণ।
-
কাবা শরিফ শুধুমাত্র একটি স্থাপত্য নয়, বরং ইসলামের কেন্দ্রীয় উপাসনাস্থল।
বর্তমানে যে কাবা আমরা দেখি, সেটি পরবর্তী সময়েও বিভিন্ন খলিফা ও শাসকদের আমলে পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে। তবে এর মূল ভিত্তি এবং কাঠামো হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর আমল থেকেই রক্ষিত আছে।